আজ সোমবার, ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২ সড়ক বাদে পুরো নারায়ণগঞ্জ লকডাউন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৪ ঘন্টায় সারা দেশে যতজন আক্রান্ত হয়েছেন তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জেরই ১২ জন। এ অবস্থায় রোববারের ঘোষিত লকডাউন এলাকা আরও বৃদ্ধি করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল তারা জানিয়েছে, শুধুমাত্র ২টি মহাসড়ক ছাড়া গোটা নারায়ণগঞ্জ লকডাউন থাকবে। পুলিশ প্রশাসন বলেছে, লকডাউনের সময়ে অযথা কেউ বের হয়ে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

সাধারণ মানুষ এমনকি সংশ্লিষ্ট পাড়া মহলায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এ পর্যন্ত শুধু নারায়ণগঞ্জের ২৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায়  নারায়ণষগঞ্জের ১২ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে সোমবার ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন আইইডিসিআর এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা। এর আগে আরও ১১ জন আক্রান্ত ছিলেন। আগে ৩ জন সুস্থ হওয়ার কথা জানা গেলেও গতকাল এমন সংবাদ দিতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসন সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওতায় থাকা যে সব এলাকার রয়েছে তা লকডাউন করে দিয়েছে। তবে এখনো বিভিন্ন স্থানে জনসমাগম করছে স্থানীয়রা। এছাড়া আরও কয়েকটি এলাকায় সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে।

ফতুল্লা পূর্ব লামাপাড়া এলাকায় একটি বাড়ি ও পাশের সড়কটি লকডাউন করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এই বাড়িতে করোনা আক্রান্ত এক রোগী শনাক্ত হওয়ায় ৫ এপ্রিল রোববার দুপুর ৩টা হতে ওই লাকডাউনের ঘোষণা দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক।

নন্দিপাড়া এলাকার ৫ শতাধিক পরিবারকে লকডাউন করে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও জেলা স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির সদস্যরা। এসময় তাদের কাউকে ঘর থেকে বের না হতে এবং বাইরে থেকে কাউকে ঘরে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

শহরের পুরাতন পালপাড়ায় এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় ওই এলাকায় প্রবেশের দুই মুখ টিন দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী যাতে করে বহিরাগত কেউ প্রবেশ না করতে পারে কিংবা ওই এলাকার কেউ অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হতে পারে। গত ৩ এপ্রিল শুক্রবার রাতে পালপাড়া এলাকার বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে একটি মুখ গেইট দিয়ে তালা দেওয়া হয়। এছাড়াও অন্যদিকে ফকিরটোলা মসজিদের পাশে টিন দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বন্দরে মারা যাওয়া ওই নারী তার বাবার বাড়ি শহরের পাইকপাড়া এলাকাতেও গিয়েছিলেন। সেখানেও একটি বহুতল ভবনসহ দুটি বাড়িকে লকডাউন করা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকার একটি বাড়ির ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাসহ ৯টি পরিবারের ২৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শহরের এক নং বাবুরাইল এলাকাতে ফয়সাল সুজন (৪৬) নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। তিনি ব্যবসায়িক কাজে ভারত ও চিনে যাতায়াত করতেন। জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শনিবার ৪ এপ্রিল সকালে তাঁর মৃত্যুর পর গুজবে মরদেহ দাফনের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে দুপুরে পুলিশের প্রহরায় দাফন করা হয়। ইতোমধ্যে পরিবারের ১৩ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে

শহরের আমলাপাড়া ও গলাচিপা এলাকার দুটি বাড়িতে সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে আমলাপাড়া এলাকার একজন সনাতন ধর্মালম্বী স্ব উদ্যোগে গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর পরেই ওই বাড়িতে সতর্কাবস্থা জারি করা হয়। অপরদিকে শহরের গলাচিপা এলাকার একটি বাড়িতেও সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে। ওই বাড়িতে তিনজন রয়েছে যারা বন্দরে ৩০ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া নারীর আত্মীয় স্বজন। এ কারণেই ওই তিনজনের বাড়িতে যান সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

শহরের উত্তর চাষাঢ়ায় একটি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। গত শনিবার (৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে সদর মডেল থানা পুলিশ এ লকডাউন করে দেন। দুই তিনদিন আগে একজন ভারত থেকে এসে গোপনে এ বাড়িতে উঠেন। তারপর থেকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা থাকলেও তিনি তা না থেকে ঘুরে বেড়ান। পরে তাদেরকে লকডাউন করে দেয়া হয়।

চাষাড়ায় বেইলী টাওয়ারে বসবাসরত এক ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় বেইলি টাওয়ারকে অঘোষিত লকডাউন করে দেয়া হয়েছেন। গত ২৩ মার্চ রাতে ওই ডাক্তারের জ্বর আসে। গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত তিনি বাসায় ছিলেন। এরপর গত ২৫ মার্চ তিনি ডাক্তার দেখাতে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনায় আক্রান্ত সন্দেহ হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে করোনা পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। ডাক্তারদের পরামর্শে তিনি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট পজিটিভ আসে। পরবর্তীতে এই ঘটনায় বেইলি টওয়ারকে লকডাউন করে দেয়া হয়।

সংবাদচর্চা/এসএম

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ